অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বেশিরভাগ ইসরাইলি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী এবং গাজায় নজিরবিহীন গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধকে তারা ন্যায্য বলে বিশ্বাস করে।
ড. এমাদ মুসার নোট থেকে দেওয়া একটি উদ্ধৃতি:
প্রতিটি সমাজের নেতারা তাদের সমাজ ব্যবস্থা, বিশ্বাস, সামাজিক পরিচয়, নৈতিকতা এবং মানসিক অবস্থার ফসল। তারা কিছুই করে না যদি না তারা সামাজিকভাবে উত্সাহিত হয়, তাদেরকে অনুমোদন করা হয় কিংবা অন্ততপক্ষে সহ্য করা হয়।
বেশিরভাগ ইসরাইলি নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষুব্ধ। গত ৭ অক্টোবরের নিরাপত্তা ত্রুটি, হামাসের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতা এবং ইসরাইলের তথাকথিত গণতন্ত্রের দুর্বলতার জন্য তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করছে সবাই। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে একইসঙ্গে তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর নীতি সমর্থন করছে।
এছাড়াও বেশিরভাগ ইসরাইলি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী এবং বিশ্বাস করে যে গাজায় নজিরবিহীন গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ ন্যায্য।
ইসরাইলি সোশ্যাল মিডিয়া বর্ণবাদী, গণহত্যামূলক স্লোগান এবং হাজার হাজার শিশু সহ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় আনন্দ উল্লাস করে, উৎসব করে। এ ধরনের উল্লাসের ভিডিওতে সামাজিক মাধ্যমগুলো ভর্তি হয়ে গেছে।
যিনি রুয়ান্ডার গণহত্যা কভার করেছিলেন ক্রিস ম্যাকনিল। তার মতে, তুতসিদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য হুটুরা যেসব পরিভাষা ব্যবহার করতো সেসব শব্দ এখন ইসরাইলিদের মুখে উচ্চারিত হতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরাইলি মৌলিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধী।
ইসরাইলিদের হিংস্র বাস্তবতা
এ প্রসঙ্গে ইসরাইলিদের সম্পর্কে তিনটি বিষয় বিবেচনাযোগ্য। নিজেদেরকে শিকার হিসেবে মনে করা, আত্ম-অহংকার এবং তাদের শিকার ফিলিস্তিনিদের অমানুষ হিসেবে দেখানো।
ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে যে দীর্ঘদিন ধরে ইহুদিরা শিকারের দাবি থেকে নিজেদের মুক্ত করার উপায় খুঁজছিল। সেই চিন্তা থেকেই ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ইসরাইলের জন্মকে শিকারদের মুক্তি হিসাবে দেখা হয়েছিল।
আধুনিক ইতিহাসে ইসরাইলিরাই সম্ভবত একমাত্র দখলদার যারা নিজেদেরকে শিকার বলে মনে করে। এই দাবি তাদেরকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে শেখায়।
এই অদ্ভুত চিন্তাধারাকে শক্তিশালী করার জন্য তারা ক্রমাগতভাবে নিজেদের মনে বিষয়টাকে লালন করে এবং নিজেদেরকে তারা আল্লাহর মনোনীত বলে মনে করে।
২০২৩ সালের একটি জরিপে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল: ‘ইহুদিরা ঈশ্বরের মনোনীত লোক’ বাইবেলে বর্ণিত এই কথাটি বিশ্বাস করেন কিনা; জবাবে বেশিরভাগ ইসরাইলি ইহুদি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়েছিল।
২০১৬ সালে তাদের ৬১ শতাংশের বিশ্বাস ছিল যে আল্লাহ ইসরাইল ভূখণ্ডটি তাদেরকে দান করেছেন।
অপরদিকে তারা ফিলিস্তিনীদের ওপর গণহত্যা চালানোর ব্যাখ্যা হিসেবে ফিলিস্তিনীদেরকে অমানুষ হিসেবে নামকরণ করে যাতে কেউ বলতে না পারে যে আল্লাহর মনোনীত গোত্র কেন এভাবে ফিলিস্তিনীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
ইসরাইলি ইহুদিদের দৃষ্টিতে, ফিলিস্তিনিদের কোনো মানবাধিকার নেই।
এর মানে হল ফিলিস্তিনিদের কোন মানবাধিকার নেই। মানুষের মতো দেখতে ওইসব প্রাণীকে ইসরাইল জবাই করতে পারে এবং কোনোরকম শাস্তির চিন্তা ছাড়াই তারা ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করতে পারে।
এই তিনটি কারণে ইসরাইলি সমাজ নিজেদেরকে আত্মম্ভরী মনে করে এবং ফিলিস্তিনীদের ওপর গণহত্যা চালাতে কোনোরকম চিন্তাভাবনা করতে হয় না তাদের।
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এ ধরনের প্যাথলজিকাল নার্সিসিস বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি সমাজ নৈতিকভাবে নিজেদেরকে উচ্চতর মনে করে এবং নৈতিক দিক বিবেচনা না করেই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করার অধিকার তাদের রয়েছে বলে বিশ্বাস করে।
এ কারণেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার কট্টরপন্থি দলের লোকেরা ১৪ হাজার ফিলিস্তিনী শিশুকে নির্দ্ধিধায় হত্যা করতে উৎসাহ দেয় এবং লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়।
আমাদের জানা উচিত যে সে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরাইলি ইহুদিদের সমর্থনেই এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং নেতানিয়াহু শুধুমাত্র নিজেই অসুস্থ নয় বরং একটি অসুস্থ সমাজের প্রতিনিধি সে।
*ডঃ এমাদ মুসা একজন গবেষক এবং লেখক, রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের ওপর আলোকপাত করেন তিনি। মানবাধিকার এবং সাংবাদিকতায় তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের উপদেষ্টা এবং বেশ কয়েকটি মিডিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়েও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
Leave a Reply